ShaifBD
Well-known member
ঘ্যাচ করে ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো বিশাল দেহী টয়োটা প্রোভা জীপটা। শক্তিশালী ইঞ্জিনের গুমগুম আওয়াজ দেহে কম্পন ধরিয়ে দিলো। সকাল্বেলার স্বরনালী রোদ ভারিক্কী গাড়িটার কুচকুচে কালো বর্ণের ইস্পাত দেহে ঝিলিক মারছে।
জান্ত্রিক গুঞ্জন তুলে জীপ গাড়িটার পেছনে কালো শেডে মোড়া গ্লাসটা নেমে গেল। কাঁচের দেয়াল অবনমিত হওয়ায় পেছনের আসনে বসে থাকা হাস্যোজ্বল মুখটা নজরে এলো।
সকাল বেলায় ইস্কুলে যাবো বলে সবে রাস্তায় এসে দারিয়েছিলাম আমি আমার মা। ঢাকার রাস্তায় এতো সকালে অটো রিক্সা সহজে পাওয়া যায় না, তাই স্কুল তাইমের অন্তত আধ ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয় আমাদের।
দশম শ্রেনীর ছাত্র আমি। একাই যাতায়াত করতে সক্ষম। কিন্তু আমি নাছোরবান্দা। হাজার হোক এক্মারত সন্তান, তাই রীতিমত জোরজবরদস্তি করেই আমাকে নামিয়ে দিতে যায় মা। কখনো সখনো, বিশেষত দুদপুরে শপিঙ্গে গেলে, স্কুল ছুটি হলে আমায় নিতেও আসে। মা যে আমার শুলে দিতে (আর নিতে) আসত তা নিয়ে ক্লাসের বন্ধু-বান্ধব্রা হাসিঠাট্টা করে। আমার শত আপত্তি, অভিমান সত্ত্বেও মা-কে টলানো যায় নি – হররোজ আমায় স্কুলে নামিয়ে দিতে মা আসবেই। উচ্চশিক্ষিতা হলেও আদতে আটপৌরে গৃহবধূই তো, সারাদিন বাড়িতে থেকে থেকে বোরড হয় বেচারী। রোজকার এই স্কুল ডিউতি মায়ের নিস্তরঙ্গ জীবনের একঘেয়েমী ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করে। তা অনুধাবন করতে পেরে ইদানিং আর মা’র সঙ্গে স্কুলে যেতে আপত্তি করি না।
ফলাফল আমায় নিয়ে ক্লাসের ছেলেপুলেরা হাসিঠাট্টা করে। তা তো করবেই, ক্লাসের ফাস্টবয় আমি। অতএব ছিদ্রান্বেসী, ঈর্ষান্বিত সহপাঠীরা আমার পেছনে লাগাটায় স্বাভাবিক। ছেলেরা অবস্য আমার সুন্দরী যুবতী আম্মিটাকে নিয়ে আরও অনেক ধরনের রসালো আলোচনাও করে। তবে সে নিয়ে বিশদ না হয় পড়ে হবে।
দামী প্রাভো জীপের পেছনের জানলা দিয়ে আমার নতুন বন্ধু রাহুল সেনের শ্যামলা, হাস্যজ্বল মুখটা উঁকি মারল। হাত নেড়েশুভেচ্ছা জানালো সে, “হাই দোস্ত! হাই নাইলা মাসী!”
প্রত্যুত্তরে আমি হেঁসে হাত নারলাম। মা অবাক হয়ে বল্ল,’আরে রাহুল! এখানে কি করে?”
রাহুল উৎসাহী গলায় বলে, ‘মাসিমা, তোমরা সাত সকালে এতো কষ্ট করে ইস্কুলে যাও, ভাবতে খারাপ লাগে। আজ থেকে তোমরা আমার সাথে স্কুলে যাবে। এখন থেকে আমি রোজ গাড়ি নিয়ে আসব তোমাদের তুলে নিতে’।
রাহুলদের দামী গাড়িটাতে চড়ে স্কুলে যেতে পারব শুনে আমি খুশি হয়ে হেঁসে দিলাম। তবে মা আপত্তি করতে লাগলো, ‘না রাহুল ।। তুই এতো দূরে থাকিস, সরাসরি স্কুলে না গিয়ে এতটা পথ ঘুরে আমাদের এখানে আসবি – ওতে তোর লেট হয়ে যাবে তো’।
‘নায়লা মাসীমা!’ রাহুল আপত্তি করে বলে , ‘তুমিই তো সবসময় বলে থাকো আমাকে নিজের ছেলের মতো মনে করো। আর আমিও তোমায় আপন মা’ইয়ের মতই ভাবী। মা’র জন্য এটুকু তো কোনও কষ্টই না … আমার সত্যিকারের মা বেঁচে থাকলে এতটুকু কি করতাম না?’ গলাটা আদ্র হয়ে ওঠে রাহুলের।
এরপরে আর কথা চলে না। মা’য়ের আপত্তি ধোপে টেকে না।
আমি হাততালি দিয়ে বলে উঠি, ‘দারুণ হবে আম্মি! রোজ রোজ রাহুলদের বড় গাড়িতে চড়ে যেতে পারব!’
মা একটু কাষ্ঠ হাসি দেয়।
রাহুল দরজাটা খুলে ধরে আহবান করে, ‘এসো মাসীমা, তোমার হিন্দু ছেলের গাড়িতে ওঠো’।
অগ্যতা শ্রাগ করে গাড়িটাতে উঠতে উদ্যত হয় মা।
জীপটা ভূমি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে। অনভ্যস্ত হওয়ায় হাইহীল জুতো নিয়ে উঠতে বেগ পাচ্ছিল বেচারী আম্মি। ভেতর থেকে দুহাত বাড়িয়ে দেয় রাহুল, শরট-স্লীভ ব্লাউজ পরিহিতা মা’য়ের উন্মুক্ত, ফর্সা ও পেলব বাহুজুগল খামচে ধরে ওকে টেনে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। রাহুলের কাঁধ ধরে উঠে গাড়িতে ঢুকে পড়ে মা। মা’কে নিজের পাশে বসিয়ে নেয় রাহুল।
আমিও উঠে পড়ি স্বাচ্ছন্দে, আগেও বহুবার রাহুলদের এই গাড়িটাতে চড়েছি। জানালার পাশের সীটটাতে গ্যাঁট হয়ে বসে পড়ি। দু’পাশে আমরা দু’জন ছাত্র, আর মাঝখানে আমাদের মা – আমার আপন আম্মি, আর রাহুলের পাতানো মা – মিসেস নায়লা খান।
দরজা বন্ধ করলে গাড়ি ছেড়ে দেয় রাহুলদের গাড়িচালক নিমাইদা। শক্তিশালী এসির শীতল হাওয়া শরীরে স্বস্তির আবেশ ছড়িয়ে দেয়। মা’ইয়ের মেয়েলী, পেলব ডান হাতখানা দু হাতে মুঠি ভরে নিজের কোলের ওপর রাখে রাহুল, মা’র নরম হাতখানা আলতো করে টিপতে টিপতে ওর সঙ্গে খুচরো আলাপ করতে থাকে সে।
শক্তিশালী ইঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন তুলে সকালের আধ-ফাঁকা রাজপথ ধরে আগাতে থাকে আমাদের বিশাল গাড়িটা।
মাস দুয়েক আগে আমাদের মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ে ট্রান্সফার হয়ে এসেছিল ছেলেটা। ক্লাসে নবগতা ছেলেটার পরিচিত কেউ ছিল না, আর খানিকটা মুখচোরা স্বভাবের কারণে সহপাঠীদের সাথে সহসা নতুন বন্ধুত্ব পাতাতেও ব্যারথ হল সে। কানাঘুষায় জানলাম বেশ বড়লোকের একমাত্র ছেলে। দামী গাড়িতে করে স্কুলে আসে। হররোজ ধবধবে পরিপাটি ইস্ত্রি করা নতুন নতুন ইউনিফর্ম। খুব দামী স্কুল্ব্যাগ, বিদেশি সুপারহিরোর ছবি সংবলিত ব্যায়বহুল টিফিন বক্স ও পানির ফ্লাস্ক, পেন্সিল বক্স ইত্যাদি দেখে ক্লাসের ছেলেমেয়েরা ভড়কে গেল। বিত্তশালী সহপাঠির কাছে ভেড়ার সাহস পেল না কেউ। অতএব মুখচোরা ছেলেটা নিঃসঙ্গ সময় কাটাচ্ছিল।
ক্লাসের ফার্স্ট বয় এবং মনিটার হিসেবে আমার ওপর শ্রেনী শিক্ষক দায়িত্ব দিলেন তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে, নতুন স্কুলের পরিবেশে মানিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য। রাহুলের বাবা-মা নেই তা শুনেছিলাম কানাঘুষায়। কদিন পড়ে রাহুলের জীবনে ঘটে যাওয়া বিরাট ট্রাজেডিটা সম্পর্কে অবগত হলাম। খুব অল্প বয়সে এক মরমান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে ছিল বেচারা ছেলেটা। তার করুণ জীবনকাহিনী শুনে বেজায় ব্যাথিত হলাম আমি।
ওর দাদু বিরাট শিল্পপতি। ছতকাল থেকে দাদু, কাকা আর জ্যেঠিমাদের কাছে বড় হয়েছে রাহুল। রাহুলদের একান্নবর্তী হিন্দু পরিবার। ওর দাদু, তিন কাকা ও কিছু নিকটাত্মীয় স্বীয় পরবার সহকারে একই বাড়িতে থাকেন। চাকরবাকর মিলিয়ে সাকুল্যে জনা কুড়ি লোকের বসবাস ওদের বাড়িতে, সবসময় গমগম করছে বাড়িটা। এ যুগে এমনটা সচরাচর দেখা যায় না।
ভরা জনারণ্যেও কি নিঃসঙ্গ ছেলেটা। বিরাট শিল্পপতি পরিবারের অবাধ বিত্তিবৈভবের মধ্যে বড় হয়েছে রাহুল। কখনই কোনও কিছুর অনটন ছিল না। যখন যা মনে চেয়েছে বলার আগেই পেয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু এতো প্রাচুর্য্যের মধ্যেও আপন মা-বাবার তীব্র অভাব্বোধ ওকে কুরে কুরে খায়। প্রথমবার বন্ধুর করুণ কাহিনী শুনে বিষাদে মনটা কেঁদে উঠেছিল।
আমার মুখ থেকে রাহুলের মরমান্তিক জীবনের গল্প শুনে মাও ব্যাথাতিত হয়েছিল। ছেলের বন্ধুকে দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল মা। সরল্মনে আমিও একদিন ক্লাসের বন্ধুকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলাম।
ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারি নি, খাল কেটে কুমীর ডেকে আনছি আসলে।
জান্ত্রিক গুঞ্জন তুলে জীপ গাড়িটার পেছনে কালো শেডে মোড়া গ্লাসটা নেমে গেল। কাঁচের দেয়াল অবনমিত হওয়ায় পেছনের আসনে বসে থাকা হাস্যোজ্বল মুখটা নজরে এলো।
সকাল বেলায় ইস্কুলে যাবো বলে সবে রাস্তায় এসে দারিয়েছিলাম আমি আমার মা। ঢাকার রাস্তায় এতো সকালে অটো রিক্সা সহজে পাওয়া যায় না, তাই স্কুল তাইমের অন্তত আধ ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয় আমাদের।
দশম শ্রেনীর ছাত্র আমি। একাই যাতায়াত করতে সক্ষম। কিন্তু আমি নাছোরবান্দা। হাজার হোক এক্মারত সন্তান, তাই রীতিমত জোরজবরদস্তি করেই আমাকে নামিয়ে দিতে যায় মা। কখনো সখনো, বিশেষত দুদপুরে শপিঙ্গে গেলে, স্কুল ছুটি হলে আমায় নিতেও আসে। মা যে আমার শুলে দিতে (আর নিতে) আসত তা নিয়ে ক্লাসের বন্ধু-বান্ধব্রা হাসিঠাট্টা করে। আমার শত আপত্তি, অভিমান সত্ত্বেও মা-কে টলানো যায় নি – হররোজ আমায় স্কুলে নামিয়ে দিতে মা আসবেই। উচ্চশিক্ষিতা হলেও আদতে আটপৌরে গৃহবধূই তো, সারাদিন বাড়িতে থেকে থেকে বোরড হয় বেচারী। রোজকার এই স্কুল ডিউতি মায়ের নিস্তরঙ্গ জীবনের একঘেয়েমী ক্লান্তি কাটাতে সাহায্য করে। তা অনুধাবন করতে পেরে ইদানিং আর মা’র সঙ্গে স্কুলে যেতে আপত্তি করি না।
ফলাফল আমায় নিয়ে ক্লাসের ছেলেপুলেরা হাসিঠাট্টা করে। তা তো করবেই, ক্লাসের ফাস্টবয় আমি। অতএব ছিদ্রান্বেসী, ঈর্ষান্বিত সহপাঠীরা আমার পেছনে লাগাটায় স্বাভাবিক। ছেলেরা অবস্য আমার সুন্দরী যুবতী আম্মিটাকে নিয়ে আরও অনেক ধরনের রসালো আলোচনাও করে। তবে সে নিয়ে বিশদ না হয় পড়ে হবে।
দামী প্রাভো জীপের পেছনের জানলা দিয়ে আমার নতুন বন্ধু রাহুল সেনের শ্যামলা, হাস্যজ্বল মুখটা উঁকি মারল। হাত নেড়েশুভেচ্ছা জানালো সে, “হাই দোস্ত! হাই নাইলা মাসী!”
প্রত্যুত্তরে আমি হেঁসে হাত নারলাম। মা অবাক হয়ে বল্ল,’আরে রাহুল! এখানে কি করে?”
রাহুল উৎসাহী গলায় বলে, ‘মাসিমা, তোমরা সাত সকালে এতো কষ্ট করে ইস্কুলে যাও, ভাবতে খারাপ লাগে। আজ থেকে তোমরা আমার সাথে স্কুলে যাবে। এখন থেকে আমি রোজ গাড়ি নিয়ে আসব তোমাদের তুলে নিতে’।
রাহুলদের দামী গাড়িটাতে চড়ে স্কুলে যেতে পারব শুনে আমি খুশি হয়ে হেঁসে দিলাম। তবে মা আপত্তি করতে লাগলো, ‘না রাহুল ।। তুই এতো দূরে থাকিস, সরাসরি স্কুলে না গিয়ে এতটা পথ ঘুরে আমাদের এখানে আসবি – ওতে তোর লেট হয়ে যাবে তো’।
‘নায়লা মাসীমা!’ রাহুল আপত্তি করে বলে , ‘তুমিই তো সবসময় বলে থাকো আমাকে নিজের ছেলের মতো মনে করো। আর আমিও তোমায় আপন মা’ইয়ের মতই ভাবী। মা’র জন্য এটুকু তো কোনও কষ্টই না … আমার সত্যিকারের মা বেঁচে থাকলে এতটুকু কি করতাম না?’ গলাটা আদ্র হয়ে ওঠে রাহুলের।
এরপরে আর কথা চলে না। মা’য়ের আপত্তি ধোপে টেকে না।
আমি হাততালি দিয়ে বলে উঠি, ‘দারুণ হবে আম্মি! রোজ রোজ রাহুলদের বড় গাড়িতে চড়ে যেতে পারব!’
মা একটু কাষ্ঠ হাসি দেয়।
রাহুল দরজাটা খুলে ধরে আহবান করে, ‘এসো মাসীমা, তোমার হিন্দু ছেলের গাড়িতে ওঠো’।
অগ্যতা শ্রাগ করে গাড়িটাতে উঠতে উদ্যত হয় মা।
জীপটা ভূমি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে। অনভ্যস্ত হওয়ায় হাইহীল জুতো নিয়ে উঠতে বেগ পাচ্ছিল বেচারী আম্মি। ভেতর থেকে দুহাত বাড়িয়ে দেয় রাহুল, শরট-স্লীভ ব্লাউজ পরিহিতা মা’য়ের উন্মুক্ত, ফর্সা ও পেলব বাহুজুগল খামচে ধরে ওকে টেনে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। রাহুলের কাঁধ ধরে উঠে গাড়িতে ঢুকে পড়ে মা। মা’কে নিজের পাশে বসিয়ে নেয় রাহুল।
আমিও উঠে পড়ি স্বাচ্ছন্দে, আগেও বহুবার রাহুলদের এই গাড়িটাতে চড়েছি। জানালার পাশের সীটটাতে গ্যাঁট হয়ে বসে পড়ি। দু’পাশে আমরা দু’জন ছাত্র, আর মাঝখানে আমাদের মা – আমার আপন আম্মি, আর রাহুলের পাতানো মা – মিসেস নায়লা খান।
দরজা বন্ধ করলে গাড়ি ছেড়ে দেয় রাহুলদের গাড়িচালক নিমাইদা। শক্তিশালী এসির শীতল হাওয়া শরীরে স্বস্তির আবেশ ছড়িয়ে দেয়। মা’ইয়ের মেয়েলী, পেলব ডান হাতখানা দু হাতে মুঠি ভরে নিজের কোলের ওপর রাখে রাহুল, মা’র নরম হাতখানা আলতো করে টিপতে টিপতে ওর সঙ্গে খুচরো আলাপ করতে থাকে সে।
শক্তিশালী ইঞ্জিনের মৃদু গুঞ্জন তুলে সকালের আধ-ফাঁকা রাজপথ ধরে আগাতে থাকে আমাদের বিশাল গাড়িটা।
মাস দুয়েক আগে আমাদের মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ে ট্রান্সফার হয়ে এসেছিল ছেলেটা। ক্লাসে নবগতা ছেলেটার পরিচিত কেউ ছিল না, আর খানিকটা মুখচোরা স্বভাবের কারণে সহপাঠীদের সাথে সহসা নতুন বন্ধুত্ব পাতাতেও ব্যারথ হল সে। কানাঘুষায় জানলাম বেশ বড়লোকের একমাত্র ছেলে। দামী গাড়িতে করে স্কুলে আসে। হররোজ ধবধবে পরিপাটি ইস্ত্রি করা নতুন নতুন ইউনিফর্ম। খুব দামী স্কুল্ব্যাগ, বিদেশি সুপারহিরোর ছবি সংবলিত ব্যায়বহুল টিফিন বক্স ও পানির ফ্লাস্ক, পেন্সিল বক্স ইত্যাদি দেখে ক্লাসের ছেলেমেয়েরা ভড়কে গেল। বিত্তশালী সহপাঠির কাছে ভেড়ার সাহস পেল না কেউ। অতএব মুখচোরা ছেলেটা নিঃসঙ্গ সময় কাটাচ্ছিল।
ক্লাসের ফার্স্ট বয় এবং মনিটার হিসেবে আমার ওপর শ্রেনী শিক্ষক দায়িত্ব দিলেন তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে, নতুন স্কুলের পরিবেশে মানিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য। রাহুলের বাবা-মা নেই তা শুনেছিলাম কানাঘুষায়। কদিন পড়ে রাহুলের জীবনে ঘটে যাওয়া বিরাট ট্রাজেডিটা সম্পর্কে অবগত হলাম। খুব অল্প বয়সে এক মরমান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে ছিল বেচারা ছেলেটা। তার করুণ জীবনকাহিনী শুনে বেজায় ব্যাথিত হলাম আমি।
ওর দাদু বিরাট শিল্পপতি। ছতকাল থেকে দাদু, কাকা আর জ্যেঠিমাদের কাছে বড় হয়েছে রাহুল। রাহুলদের একান্নবর্তী হিন্দু পরিবার। ওর দাদু, তিন কাকা ও কিছু নিকটাত্মীয় স্বীয় পরবার সহকারে একই বাড়িতে থাকেন। চাকরবাকর মিলিয়ে সাকুল্যে জনা কুড়ি লোকের বসবাস ওদের বাড়িতে, সবসময় গমগম করছে বাড়িটা। এ যুগে এমনটা সচরাচর দেখা যায় না।
ভরা জনারণ্যেও কি নিঃসঙ্গ ছেলেটা। বিরাট শিল্পপতি পরিবারের অবাধ বিত্তিবৈভবের মধ্যে বড় হয়েছে রাহুল। কখনই কোনও কিছুর অনটন ছিল না। যখন যা মনে চেয়েছে বলার আগেই পেয়ে গিয়েছে সে। কিন্তু এতো প্রাচুর্য্যের মধ্যেও আপন মা-বাবার তীব্র অভাব্বোধ ওকে কুরে কুরে খায়। প্রথমবার বন্ধুর করুণ কাহিনী শুনে বিষাদে মনটা কেঁদে উঠেছিল।
আমার মুখ থেকে রাহুলের মরমান্তিক জীবনের গল্প শুনে মাও ব্যাথাতিত হয়েছিল। ছেলের বন্ধুকে দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল মা। সরল্মনে আমিও একদিন ক্লাসের বন্ধুকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলাম।
ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারি নি, খাল কেটে কুমীর ডেকে আনছি আসলে।